মোট পৃষ্ঠাদর্শন

    ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
        মাইকেল মধুসূদন দত্ত

  বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
  করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
  দীন যে, দীনের বন্ধু!—উজ্জ্বল জগতে
  হেমাদ্রির হেমকান্তি অম্লান কিরণে।
  কিন্তু ভাগ্যবলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
  যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
  সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
  গিরীশ। কি সেবা তার সে মুখ সদনে।—
  দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
  যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
  তরুদল, দাসরূপ ধরি;
  পরিমলে ফুলকুল দশ দিশ ভরে;
  দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
  নিশার সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!

গত দুইশ বছরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে অসংখ্য আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তিনি নিজের কালে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি তার বিরোধীপক্ষ সমালোচনার তিরে তাকে বিদ্ধ করতেও পিছপা হয়নি। বিরোধীপক্ষের লেখায় ও কথায় জর্জরিত হয়েছেন তিনি। নানাভাবে তাকে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে। তাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু তিনি পিছপা হননি নিজের দায়িত্ব থেকে। যা তিনি সমাজের ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক মনে করেছেন, তা বাস্তবায়নে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম পণ্ডিত নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে যে কর্মজীবন, তা শেষ হয় ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। এর পর আমৃত্যু (মৃত্যু ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট) তিনি সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি ব্যস্ত ছিলেন বই লেখা ও বই ছাপার কাজে। কথিত আছে যে, সিপাহী বিদ্রোহের সময় অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া কলেজে সেনানিবাস স্থাপনের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেন।

—মামুন রশীদ



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে জানেন না, তার সম্পর্কে শোনেননি— এমন বাঙালির সংখ্যা বিরল। ইতোমধ্যে আমরা জন্মের দ্বিশতবর্ষ পেরিয়ে এসেছি। অথচ দুইশ বছরেও তার কীর্তি ম্লান হয়নি। তাই স্বকালে যেমন তেমনি উত্তরকালেও বিদ্যাসাগর আলোচিত এবং আলোকিত।

যতো দিন যাচ্ছে, তিনি আরও স্বমহিমাণ্ডিত হয়ে উঠছেন। তার কীর্তিই তাকে আলোচনায় রেখেছে। সমাজে ও দেশের মানুষের মাঝে, অন্ধ-অজ্ঞ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে জাগিয়ে তুলতে যে আলো তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সে আলোতেই কেটেছে আঁধার। সে আলোর রেখা ধরেই এগিয়ে চলা।
vidyasagar.info ©