ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু!—উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেমকান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্যবলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে মুখ সদনে।—
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘশিরঃ তরুদল, দাসরূপ ধরি;
পরিমলে ফুলকুল দশ দিশ ভরে;
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশার সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!
বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তনের পক্ষে ভারত সরকারের কাছে প্রেরিত গণ-আবেদনপত্রে প্রথম স্বাক্ষরটি করেন পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগর অগস্ট মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও মদনমোহন এ সময়ে নিশ্চেষ্ট ছিলেন না। লিখছেন গৌতম সরকারবিধবা বিবাহের ব্যাপারে মদনমোহনের দ্বিতীয় ও প্রধান কাজ ছিল আইন পাশের পরে বিধবা বিবাহের জন্য পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা।

—গৌতম সরকার



হিন্দু রক্ষণশীল সমাজের তীব্র প্রতিবাদ, অভব্য আচরণ, সংস্কৃত ও বাংলা শ্লোকমিশ্রিত অনবরত গালি উপেক্ষা করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নাছোড় লড়াইয়ের ফলে শেষ পর্যন্ত ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই পাশ হয়ে গেল যুগান্তকারী ‘বিধবা বিবাহ আইন’। এর ফলে তৎকালীন হিন্দু সমাজে বাল্যবিধবা মেয়েদের সারা জীবন ধরে অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণার নিরসন ঘটল। তবে এই আন্দোলনে বিদ্যাসাগরকে সমর্থন করেন মুর্শিদাবাদবাসীর কিয়দংশ। কেননা জেলাতে সৈয়দাবাদ নিবাসী কবিরাজ গঙ্গাধর সেনের নেতৃত্বে বিরুদ্ধ জনমত সংগঠিত করার উদ্যোগও চলেছিল। কাশিমবাজার রাজপরিবারের মহারানি স্বর্ণময়ীর‌ অবশ্য এই আন্দোলনে সহযোগিতার কথা শোনা যায়। মদনমোহন নিজে মুর্শিদাবাদে বিধবাবিবাহের পক্ষে আইন পাশ করানোর জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছিলেন। তার পরে এ জেলা থেকেই ১৮৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, সার্কেল পণ্ডিত সুরেশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতৃত্বে গৃহীত স্বাক্ষরপত্র কলকাতায় পৌঁছয়। বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তনের পক্ষে ভারত সরকারের কাছে মুর্শিদাবাদ থেকে প্রেরিত শতাধিক গণ-আবেদনপত্রে প্রথম স্বাক্ষরটি করেন পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার।

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

vidyasagar.info ©