দীর্ঘ ও বৈচিত্রময় জীবনে বিদ্যাসাগর আরো বহু মেধাবী ব্যক্তির সঙ্গ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাজেন্দ্রলাল মিত্র, মদনমোহন
তর্কলংকার, প্যারিচরণ সরকার প্রমুখ। বিদ্যাসাগরের জীবনে প্রত্যেকের অবদান আছে। সে সমস্ত কথা বাকি রেখেই বলতে পারি
বিদ্যাসাগর তাঁর মহত্ত্ব দিয়েই এই সম্পর্কগুলো গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তাঁর সুউচ্চ ব্যক্তিত্বই অনেকের মধ্যে থেকে তাঁকে
স্বতন্ত্র মহিমা দিয়েছে।
—তুলসীদাস মাইতি
“বিদ্যাসাগর আচারের দুর্গকে আক্রমণ করেছিলেন, এই তাঁর আধুনিকতার একমাত্র পরিচয় নয়। যেখানে তিনি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যবিদ্যার মধ্যে সম্মিলনের সেতুস্বরূপ হয়েছিলেন সেখানেও তাঁর বুদ্ধির ঔদার্য প্রকাশ পেয়েছে। তিনি যা-কিছু পাশ্চাত্য তাকে অশুচি বলে অপমান করেন নি। তিনি জানতেন বিদ্যার মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের দিগবিরোধ নেই। তিনি নিজে সংস্কৃতশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তিনিই বর্তমান য়ুরোপীয় বিদ্যার অভিমুখে ছাত্রদের অগ্রসর করবার প্রধান উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং উৎসাহ ও চেষ্টায় পাশ্চাত্য বিদ্যা আয়ত্ত করে করেছিলেন।”
কথাগুলি রবীন্দ্রনাথের। ১৩২৯ সালের ১৭ শ্রাবণ ব্রাহ্মসমাজ আয়োজিত বিদ্যাসাগর-স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেছিলেন। এই কথাগুলি থেকে ‘আধুনিকতম মানুষ বিদ্যাসাগর’— এই প্রসঙ্গের একটা আভাস পাই। বলা বাহুল্য, সমকালীন বঙ্গভূমির সামাজিক ইতিহাসে যে সমস্ত শিক্ষিত মেধাবী মনীষীগণের পরিচয় পাই তাঁদের সাথে বিদ্যাসাগরের মননগত মিল বা অমিল কতখানি তাও এই নিরিখেই করতে চাই।