ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী এবং ব্রাহ্মদের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সংস্কারপন্থার পার্থক্য সম্পর্কে অশোক সেন লিখেছেন যে, বিধবাবিবাহের মতো সংস্কারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন জনসমর্থন, চেয়েছিলেন খাঁটি অর্থে সামাজিক বৈধতা, ‘Vidyasagar was striving in a more real sense to achieve the social legitimacy of reforms’। তাঁর শাস্ত্রনির্ভরতার মূল ছিল এই বৃহত্তর লক্ষ্যে। অশোক সেন সংগত কারণেই বলেছেন যে, বিস্তৃত হিন্দু ও তৎসংলগ্ন জনজাতিদের সমাজে তাঁর প্রচেষ্টা ব্যাহত হয় কারণ শাস্ত্রে আলোচিত বিষয়গুলি ছিল একান্তভাবেই উচ্চবর্ণ হিন্দুদের। ইংরেজদের চালু করা বিধবাবিবাহ আইনে প্রয়াত স্বামীর ধনে অধিকার ত্যাগে বাধ্য হত পুনর্বিবাহিত হিন্দু নারী। এ ব্যাপারে বিদ্যাসাগর আপত্তি তোলেননি, রক্ষণশীল হিন্দু সমাজপতিদের নতুন করে ক্ষুব্ধ করতে চাননি বলেই হয়তো।
—স্বপন চক্রবর্তী
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচনা বলে একটি লেখা চলে আসছে। সংক্ষিপ্ত রচনাটির শিরোনাম ‘বাল্যবিবাহের দোষ’। ১৮৫০ সালে সেটি বেরিয়েছিল সর্ব্বশুভকরী নামের মাসিক কাগজে। অনামা লেখাটি যে বিদ্যাসাগরের কীর্তি তা বলেছেন শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন।১ বিদ্যাসাগর-রচনার বিভিন্ন সংগ্রহে সংকলিতও হয়েছে নিবন্ধটি। তবুও প্রবন্ধের একটি জায়গায় পৌঁছে খটকা লাগতে পারে পাঠকের। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে লেখক বলছেন যে, স্মৃতিশাস্ত্রের অনুজ্ঞা এবং লোকাচার মিলে এমনই এক দুর্বহ সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে গৃহস্থের উপর যে, বাল্যবিবাহ ও তার লঙ্ঘনের শাস্ত্রবিহিত শাস্তিকে নীতিবিরুদ্ধ মনে হলেও ব্যক্তিবিশেষের গত্যন্তর থাকে না, তিনি নিরুপায় চিত্তে ‘… চিরাচরিত লৌকিক ব্যবহারের পরতন্ত্র হইয়া স্বাভীষ্ট সিদ্ধি করিতে সমর্থ হন না। তাঁহার আন্তরিক চিন্তা অন্তরে উদয় হইয়া ক্ষণপ্রভার ন্যায় ক্ষণমাত্রেই অন্তরে বিলীন হইয়া যায়’ (১.৩৫৫)।