মোট পৃষ্ঠাদর্শন

    ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
        মাইকেল মধুসূদন দত্ত

  বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
  করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
  দীন যে, দীনের বন্ধু!—উজ্জ্বল জগতে
  হেমাদ্রির হেমকান্তি অম্লান কিরণে।
  কিন্তু ভাগ্যবলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
  যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
  সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
  গিরীশ। কি সেবা তার সে মুখ সদনে।—
  দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
  যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
  তরুদল, দাসরূপ ধরি;
  পরিমলে ফুলকুল দশ দিশ ভরে;
  দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
  নিশার সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!

ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী এবং ব্রাহ্মদের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সংস্কারপন্থার পার্থক্য সম্পর্কে অশোক সেন লিখেছেন যে, বিধবাবিবাহের মতো সংস্কারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন জনসমর্থন, চেয়েছিলেন খাঁটি অর্থে সামাজিক বৈধতা, ‘Vidyasagar was striving in a more real sense to achieve the social legitimacy of reforms’। তাঁর শাস্ত্রনির্ভরতার মূল ছিল এই বৃহত্তর লক্ষ্যে। অশোক সেন সংগত কারণেই বলেছেন যে, বিস্তৃত হিন্দু ও তৎসংলগ্ন জনজাতিদের সমাজে তাঁর প্রচেষ্টা ব্যাহত হয় কারণ শাস্ত্রে আলোচিত বিষয়গুলি ছিল একান্তভাবেই উচ্চবর্ণ হিন্দুদের। ইংরেজদের চালু করা বিধবাবিবাহ আইনে প্রয়াত স্বামীর ধনে অধিকার ত্যাগে বাধ্য হত পুনর্বিবাহিত হিন্দু নারী। এ ব্যাপারে বিদ্যাসাগর আপত্তি তোলেননি, রক্ষণশীল হিন্দু সমাজপতিদের নতুন করে ক্ষুব্ধ করতে চাননি বলেই হয়তো।

—স্বপন চক্রবর্তী



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচনা বলে একটি লেখা চলে আসছে। সংক্ষিপ্ত রচনাটির শিরোনাম ‘বাল্যবিবাহের দোষ’। ১৮৫০ সালে সেটি বেরিয়েছিল সর্ব্বশুভকরী নামের মাসিক কাগজে। অনামা লেখাটি যে বিদ্যাসাগরের কীর্তি তা বলেছেন শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন। বিদ্যাসাগর-রচনার বিভিন্ন সংগ্রহে সংকলিতও হয়েছে নিবন্ধটি। তবুও প্রবন্ধের একটি জায়গায় পৌঁছে খটকা লাগতে পারে পাঠকের। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে লেখক বলছেন যে, স্মৃতিশাস্ত্রের অনুজ্ঞা এবং লোকাচার মিলে এমনই এক দুর্বহ সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে গৃহস্থের উপর যে, বাল্যবিবাহ ও তার লঙ্ঘনের শাস্ত্রবিহিত শাস্তিকে নীতিবিরুদ্ধ মনে হলেও ব্যক্তিবিশেষের গত্যন্তর থাকে না, তিনি নিরুপায় চিত্তে ‘… চিরাচরিত লৌকিক ব্যবহারের পরতন্ত্র হইয়া স্বাভীষ্ট সিদ্ধি করিতে সমর্থ হন না। তাঁহার আন্তরিক চিন্তা অন্তরে উদয় হইয়া ক্ষণপ্রভার ন্যায় ক্ষণমাত্রেই অন্তরে বিলীন হইয়া যায়’ (১.৩৫৫)।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আন্তর্জাতিক সম্মেলন সমাপ্ত

—নিজস্ব প্রতিবেদক
(প্রথমআলো)


বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।

মুক্ত আসর ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির আয়োজনে সমাপনী অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, ‘বিদ্যাসাগর নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০ বছর পর বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করছি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি কত মহান ছিলেন। বিদ্যাসাগরের চর্চার মাধ্যমে জানা, বোঝার, পড়ার এক বিস্তারিত জগৎ খুলে যায়। ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে মোকাবিলা করতে হবে। বিদ্যাসাগরের কাজগুলো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি আমাদের মনের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করতে যে আগুনটা দরকার, সেই আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের মনের বিপ্লবী।’
আগামীকাল ২৬ সেপ্টেম্বর বাঙালির রেনেসাঁর অন্যতম কান্ডারি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মদিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা ও বক্তৃতায় সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করেছেন এই মনীষীকে। সেই মূল্যায়নের আলোকে বর্তমানে এই লেখায় খোঁজা হয়েছে বিদ্যাসাগরের প্রাসঙ্গিকতা।

—মালেকা বেগম


	‘হে নূতন,
দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ
তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন
            সূর্যের মতন।’

শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আনুষ্ঠানিক সংগীত’-এর তিনটি লাইন লিখলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মদিন স্মরণে। গানের এই কথাগুলো রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন নিজের জন্মদিন উপলক্ষে।

আজ এই লেখায় রবীন্দ্রনাথের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণায় মূর্ত হয়ে ওঠা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গ আলোচনা করব। ‘রবীন্দ্রনাথের বিদ্যাসাগর’ শিরোনামাঙ্কিত এ লেখায় ঈশ্বর ও রবি ভাস্বর হয়েছেন স্মৃতিকথা ও স্মরণ-বক্তৃতার আলোকে। সে জন্য ১২ আশ্বিন; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ এবং ২৫ বৈশাখ; ৭ মে ১৮৬১-এর ছেদ ঘুচিয়ে প্রবেশ করছি রবীন্দ্রচেতনার আয়নায় উদ্ভাসিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর—প্রসঙ্গ-জগতে।
বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের জন্য অব্যাহত ধারায় যে কর্মপ্রবাহে উদ্যোগী হয়ে উঠেছিলেন তার নানা দিক নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঐতিহাসিকরা বিশ্লেষণ করেছেন। বাঙালির জীবনধারায় অল্প বয়সেই একনিষ্ঠ এই ব্রাহ্মণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজে প্রচলিত বিধি নিয়ে জিজ্ঞাসামুখর হয়ে উঠেছিলেন তা আজো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তাঁর ব্যক্তিস্বরূপে ছিল একাগ্র হওয়ার সাধনা ও দৃঢ়তা। শৈশব কেটেছিল নিদারুণ অর্থকষ্টে। তবুও সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন শিক্ষাক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।

—আবুল হাসনাত



রেনেসাঁসপ্রাণিত ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ সমাজে শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও বাঙালির জীবনসাধনা এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যে বিলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, পশ্চাতে ফিরে তাকালে এই স্পন্দনকে কত না তাৎপর্যময় বলে মনে হয়।

রামমোহনের আবির্ভাব, পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান, সতীদাহ প্রথা বিলোপ ও ডিরোজিওর সঙ্গে যুক্তিনিষ্ঠতা তাঁর প্রমাণবহ। বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ প্রবর্তন এবং বহুবিবাহ রোধ ও স্ত্রীশিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম বলেই বিবেচিত হয়ে আসছে। কুলীন প্রথার ফলে ভারতীয় নারীর বিড়ম্বিত ভাগ্য নিয়ে তিনি সর্বদা খুবই বিচলিত ও চিন্তিত ছিলেন। তাঁর অবলোকন ও অনুধাবন শুধু মানবিক হওয়ার সাধনাকে দীপিত করেনি, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রকেও করেছিল আলোড়িত। এই আলোড়ন মানবিকতার স্বরূপ সন্ধানের কাজেও তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল উত্তরকালে। যুক্তিকে মর্যাদার সঙ্গে অবলোকন করতে শিক্ষা দিয়েছিল। রেনেসাঁর মর্মমূল ও চেতনা নিয়ে যে বিতর্ক আছে ইতিহাসবিদদের মধ্যে, তা সত্ত্বেও এই জাগরণ বাঙালির জীবন আবহে দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাসে ও যুক্তিবাদিতায় এক তরঙ্গ তুলেছিল। ধর্মবোধেও এনেছিল নবীন জিজ্ঞাসা। প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে তাঁর আস্থা ছিল না।
রবীন্দ্রনাথের দ্বারা নন্দিত বিদ্যাসাগর আবার কখনও রবীন্দ্রনাথকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন, মত রামকৃষ্ণবাবুর। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’-তে রয়েছে, বিদ্যাসাগরের ‘সীতার বনবাস’-এর বহুচর্চিত অংশের মুখস্থ শ্রুতিলিখন নিয়ে অপুর মুগ্ধতার কথা। ‘এই সেই জনস্থানমধ্যবর্তী প্রস্রবণ গিরি।’ রামকৃষ্ণবাবুর মতে, সহজপাঠ কিন্তু বর্ণপরিচয়ের মতো সর্বজনীন হয়নি।

—ঋজু বসু



এক জন বিদ্যাসাগরের মধ্যে মিশে রয়েছেন কত জন বিদ্যাসাগর? নারী-শিক্ষা, বিধবা বিবাহের প্রসারে ব্রতী সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগর? না বাংলা ভাষার সংস্কারের দিশারী বিদ্যাসাগর? শুক্রবার সন্ধ্যায় জবাব খুঁজল বইমেলার মাঠ। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা শাবাশ বাংলা’র সহায়তায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবের আসর মগ্ন হল বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের উদ্‌যাপনে।
ভেবে অবাক হই, প্রায় দেড় শতাধিক বছর আগে আজকের তুলনায় আরও আঁধার যুগে ভাববাদী দর্শনের কুৎসীত বিষবৃক্ষের শিকড়ে ঈশ্বরচন্দ বিদ্যাসাগর যেভাবে আঘাত করার হিম্মত দেখিয়েছিলেন, আমরা একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে তাঁকে কিংবা তাঁর কৃতকর্মকে সামান্যতমও মনে রাখার চেষ্টা করেছি কি?

—বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য্য



বিদ্যাসাগর কি নাস্তিক ছিলেন? প্রশ্নটি বার বার মনে ফিরে আসে। এই কারণে ফিরে আসে যে, আশৈশব আমরা শিখেছি ঈশ্বরচন্দ্র নামক বাহ্যত ইস্পাত কঠিন পুরুষটি আসলে দয়া ও বিদ্যার সাগর। কিন্তু বহু খোঁজাখুঁজোর পরে একটি প্রায় না জানা বিষয় পাওয়া গেছে তা হল ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ঘোর যুক্তিবাদী এবং নাস্তিক। ভাববাদী দর্শনের কুৎসীত বিষ, ধর্মীয় উন্মাদনা, যেভাবে আমাদের চৌকাঠ থেকে খিড়কিতে উঁকি মারছে তখন মনে হয় একবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাস্তিক ও যৌক্তিক দিকটা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।

বাঙালীর হৃদয়ে বিদ্যাসাগর নামটি আজও অনন্য ও বিস্ময়কর ! চাল নেই, চুলো নেই, ধন কৌলিন্য নেই, মাসিক ছ-টাকা বেতনের সওদাগরী অফিসের এক কেরাণীর ছেলে প্রধানত সংস্কৃত শিক্ষার পুঁজি ও ইংরেজীর ব্যবহারিক জ্ঞান নিয়ে সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি আন্দোলনের শীর্ষে আরোহন করলেন, হিমালয় সদৃশ উন্নত মস্তক পুরুষ হিসেবে বাঙালী জাতির প্রকৃত জনকের মর্যাদা পেলেন ক এ এক বিরলতম ঘটনা। টুত্লো পণ্ডিতের ঘরের ছেলে শাস্ত্রীয় শিক্ষাকে সম্বল করে কি ভাবে শ্রেষ্ঠ মানবতাপ্রেমী, নিরীশ্বরবাদী ও যুক্তিবাদী সমাজ সংস্কারক হয়ে উঠলেন তা এখনও গবেষণার অপেক্ষায়। স্থিতাবস্থা ও অন্ধকারপন্থীদের নির্মম নিন্দা-মন্দ সত্বেও জীবিতকালেই বিদ্যাসাগরের ছবি বিক্রী হত।
বিদ্যাসাগরের বিশিষ্টতা এখানে যে, ধর্মাক্রান্ত, দেশাচারপ্রবণ ও যৌনশুচিগ্রস্ত বাঙালীদের মধ্যে তিনি ছিলেন যথার্থই একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ : আধুনিক, ইহজাগতিক এবং খুব সম্ভবত নাস্তিক। নানা শঙ্কায় কাতর ও অজুহাতপ্রবণ বাঙালী যে সকল স্থানে যেতে পিছপা হয়েছে, বিদ্যাসাগর সেখানে উপস্থিত হয়েছেন সদর্পে। বিদ্যাসাগরের এই যে চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁকে রবীন্দ্রনাথ আখ্যায়িত করেছেন অজেয় পৌরুষ হিসেবে।

—মন্ময় জাফর



উপক্রমণিকা


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-১৮৯১) দু’শো বছরের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সমাজ সংস্কার আন্দোলনকে ফিরে দেখার প্রচেষ্টা থেকে এই প্রবন্ধের উৎপত্তি। বিধবা বিবাহ সম্পর্কিত তর্কাতর্কি মাতিয়ে রেখেছিল উনিশ শতকের প্রায় পুরোভাগ। আলোচ্য প্রবন্ধে এর পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে আলোচিত হয়েছে বিধবা বিবাহ সিদ্ধকরণে বিদ্যাসাগরের যুগান্তকারী ভূমিকা। বঙ্কিমের সর্বজনবিদিত বিদ্যাসাগর বিরোধিতার প্রসঙ্গটি সঙ্গত কারণে এসেছে। এপার ও ওপার বাংলার, বিশেষত ‘বাম ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বিদ্যাসাগরের কি ধরনের মূল্যায়ন করেছেন, তার ওপরেও আলোকপাত করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর নিজেকে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হিসেবে শুধু দেখেন নি, দেখেছেন মুক্ত চিন্তার একজন মানুষ হিসেবে। সে কারণে মিল খোঁজা হয়েছে বিদ্যাসাগরের উনিশ শতকের বিধবা বিবাহ আন্দোলন এবং একুশ শতকের সমকামী সম্পর্ক ও বিবাহকে আইনগত বৈধতাদান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির মধ্যে। বিদ্যাসাগরকে যে শুধু একজন কুশলী ও বাস্তববাদী সমাজ সংস্কারক হিসেবে দেখানো হয়েছে তা-ই নয়, বরং তাঁকে উপস্থাপন করা হয়েছে বাঙালীর দেশাচারপ্রবণ, ধর্মাক্রান্ত, যৌনশুচিগ্রস্ত ও জাড্যময় জীবনের একজন কড়া সমালোচক হিসেবে।
vidyasagar.info ©