মোট পৃষ্ঠাদর্শন

    ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
        মাইকেল মধুসূদন দত্ত

  বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
  করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
  দীন যে, দীনের বন্ধু!—উজ্জ্বল জগতে
  হেমাদ্রির হেমকান্তি অম্লান কিরণে।
  কিন্তু ভাগ্যবলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
  যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
  সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
  গিরীশ। কি সেবা তার সে মুখ সদনে।—
  দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
  যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
  তরুদল, দাসরূপ ধরি;
  পরিমলে ফুলকুল দশ দিশ ভরে;
  দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
  নিশার সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!

রেনেসাঁস-পুরুষ বিদ্যাসাগর

উনিশ শতকের নবজাগরণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। এই নবজাগরণের প্রধান চরিত্র বিদ্যাসাগর। বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিদ্যাসাগরের প্রধান পরিচয় তিনি রেনেসাঁস-পুরুষ। ইহজাগতিকতা, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানমনস্কতা, নতুন গদ্যরীতি, সমাজসংস্কার, নারীশিক্ষার প্রসার, পাঠ্যসূচি থেকে অলৌকিকতার বিলুপ্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানবমুখিনতার মতো বৈশিষ্ট্য; যা ইউরোপীয় রেনেসাঁসকে তুলে ধরেছিল, বিদ্যাসাগর তার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

—রাজীব সরকার



‘বাংলার রেনেসাঁস’ নামে বহুল আলোচিত ঘটনার কেন্দ্রস্থল ছিল উনিশ শতকের কলকাতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতী মনীষীদের আবির্ভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা নগরী। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে একটি জনপদে এত প্রতিভাবান মানুষের সম্মিলন বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ঘটনা। রামমোহন রায় থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত শতাব্দীব্যাপী ইতিহাসে বাংলায় যে-উজ্জ্বল প্রতিভার মিছিল দৃশ্যমান, এর তুলনা সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসে আর নেই। ধর্ম ও সমাজসংস্কারে, শিক্ষা-দীক্ষায়, নারী উন্নয়নে, মানবসেবায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মেষে, শিল্প-সাহিত্য-সংগীতে, আধুনিক ধ্যান-ধারণায়, সর্বোপরি স্বাধীনতা আন্দোলনে এমন বহুমুখী জাগরণ আর কখনও দেখা যায়নি ভারতবর্ষে। গোপাল হালদার যথার্থই বলেছিলেন, ‘এমন অল্পকালের মধ্যে ভারতের মাত্র একটি জাতির (বাঙালির) মধ্যে যত মনস্বীর, যত কর্মীর, যত ভাবুকের, যত শিল্পী ও সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটেছে, ভারতের ইতিহাসেও আর ঘটেনি– অশোকের কালে নয়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ে নয়, মোগল রাজত্বে– আকবরের দিনেও নয়, বৈষ্ণব আন্দোলনের বাঙলায়ও নয়।’ এই প্রতিভাবান ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর; যাঁকে অনায়াসে রেনেসাঁস-পুরুষ আখ্যা দেওয়া যায়।

উনিশ শতকের নবজাগরণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। এই নবজাগরণের প্রধান চরিত্র বিদ্যাসাগর। বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিদ্যাসাগরের প্রধান পরিচয় তিনি রেনেসাঁস-পুরুষ। ইহজাগতিকতা, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানমনস্কতা, নতুন গদ্যরীতি, সমাজসংস্কার, নারীশিক্ষার প্রসার, পাঠ্যসূচি থেকে অলৌকিকতার বিলুপ্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানবমুখিনতার মতো বৈশিষ্ট্য; যা ইউরোপীয় রেনেসাঁসকে তুলে ধরেছিল, বিদ্যাসাগর তার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের মতে বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলা গদ্যের যে সুরম্য অট্টালিকা তৈরি হয়েছে, এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন বিদ্যাসাগর। তাঁর অনুবাদমূলক রচনার মধ্যে ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’ ও ‘ভ্রান্তিবিলাস’ অনবদ্য সৃষ্টি। প্রবন্ধ, অনুবাদ, মৌলিক রচনার লেখক হিসেবে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী বিদ্যাসাগরের অন্যতম অবদান অসাধারণ শিশুপাঠ্য গ্রন্থ প্রণয়ন। তাঁর ‘বর্ণপরিচয়’, ‘বোধোদয়’ ও বিভিন্ন বিজ্ঞানী মনীষীর জীবনীগ্রন্থ শিশুদের মনে নীতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ বপন করেছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও প্রাচ্যশিক্ষার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই ইংরেজি ভাষা আয়ত্তের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পথ সুগম হয়। এজন্য মাতৃভাষা বাংলাকে তাঁর অবজ্ঞা করতে হয়নি। সংস্কৃত কলেজে কী ধরনের শিক্ষা-সংস্কার প্রয়োজন সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই অগ্রসর বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির কথা বলেছিলেন। শুধু সাহিত্য সৃষ্টির কথা তিনি বলেননি, বাংলাকে শিক্ষার অবলম্বন অর্থাৎ মাধ্যম করার কথাও বলেছেন। শিক্ষা প্রচারকদের তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে বাংলা ভাষার বিকাশ ও চর্চা অত্যন্ত জরুরি।

কলকাতায় অতিবাহিত ছাত্রজীবনে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল দলের সংঘাত দেখেছেন। একদিকে অন্ধ গোঁড়ামি ও অন্যদিকে ইয়াংবেঙ্গল বাহিত অতি প্রগতিশীলতা– এ দুয়ের মধ্যে তিনি বড় হয়েছেন। উগ্র প্রতিক্রিয়া কিংবা আধুনিকতার নামে উচ্ছৃঙ্খলতার পথ তিনি বেছে নেননি। তিনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও যুক্তিবোধ চালিত জীবন বেছে নিয়েছিলেন। শিক্ষা-সংস্কার প্রশ্নে ড. ব্যালেন্টাইনের সুপারিশের তিনি বিরোধিতা করেছেন। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারির কাছে প্রেরিত চিঠিতে তিনি বেদান্ত ও সাংখ্যকে ভ্রান্ত দর্শন বলেছেন। এর বিপরীতে ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে ভিন্ন দর্শনের পাঠ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন। ব্যালেন্টাইন প্রস্তাব করেছিলেন বার্কলের দর্শন পড়ানোর। বিদ্যাসাগর প্রতিবাদ করে বললেন, বার্কলের ভাববাদী দর্শন বেদান্ত ও সাংখ্যের মতোই ভ্রান্ত। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্কলে মনে করতেন, মনই সব, বস্তু অসার। মন দেখছে বলেই বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে, এর বাইরে বস্তুর কোনো অস্তিত্ব নেই। আর বস্তুর এই অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে ঈশ্বরের অস্তিত্বের কারণে। এই দর্শন প্রত্যাখ্যান করে বিদ্যাসাগর বলেছেন, বার্কলের বদলে পাঠ্য হওয়া উচিত জন স্টুয়ার্ট মিলের যুক্তিবিদ্যা। এভাবেই ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় তিনি যুক্তিবাদের বীজ শক্ত হাতে রোপণ করেছিলেন।

তৎকালীন পশ্চাৎপদ সমাজের অন্ধকারকে ভেদ করে বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। একই বছরে মেয়েদের জন্য ৩৫টি বিদ্যালয় খুলেছেন। বহু বছর আগেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন নারীকে অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে সমাজ অগ্রসর হতে পারবে না। তাঁর পূর্বসূরি রামমোহন রায় ‘সতীদাহ প্রথা’ রদ করে নারীর জীবন রক্ষা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রবর্তন করে নারীকে জীবনস্মৃত অবস্থা থেকে রক্ষা করেছিলেন। বহুবিবাহ বন্ধের আন্দোলন করেছিলেন। বিধবাবিবাহকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করতেন। কাজটি মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

কুপ্রথা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন বিদ্যাসাগর। ‘বাল্যবিবাহের দোষ’ রচনায় তাঁর গভীর সমাজমনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ ইহজাগতিক মূল্যবোধ দ্বারা প্রাণিত হয়ে তিনি এ প্রবন্ধ রচনা করেন। এর আবেদন শাস্ত্রজ্ঞানীর কাছে নয়, মানুষের বিবেক ও অনুভবশক্তির কাছে। শাস্ত্রনিরপেক্ষ এই মানবমুখিনতাই বিদ্যাসাগরকে হিউম্যানিস্ট পণ্ডিতের মর্যাদা দিয়েছে। বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা ও বহুবিবাহের অশাস্ত্রীয়তা প্রমাণে তিনি যে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন, এর কারণ সেই সময়ের জনগোষ্ঠী শাস্ত্রনির্দেশের কঠিন বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। শাস্ত্রবচনের উদ্ধৃতি তাঁর নিজের জন্য প্রয়োজন ছিল না। সেই যুগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শাস্ত্রকে অবলম্বন করেই রক্ষণশীলতার দুর্গে আঘাত করেছিলেন। বিধবাবিবাহ ও বহুবিবাহ বিষয়ক বইগুলো তাঁর যুক্তিবাদী মননের পরিচায়ক।

কুপ্রথা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন বিদ্যাসাগর। ‘বাল্যবিবাহের দোষ’ রচনায় তাঁর গভীর সমাজমনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ ইহজাগতিক মূল্যবোধ দ্বারা প্রাণিত হয়ে তিনি এ প্রবন্ধ রচনা করেন। এর আবেদন শাস্ত্রজ্ঞানীর কাছে নয়, মানুষের বিবেক ও অনুভবশক্তির কাছে। শাস্ত্রনিরপেক্ষ এই মানবমুখিনতাই বিদ্যাসাগরকে হিউম্যানিস্ট পণ্ডিতের মর্যাদা দিয়েছে। বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা ও বহুবিবাহের অশাস্ত্রীয়তা প্রমাণে তিনি যে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন, এর কারণ সেই সময়ের জনগোষ্ঠী শাস্ত্রনির্দেশের কঠিন বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। শাস্ত্রবচনের উদ্ধৃতি তাঁর নিজের জন্য প্রয়োজন ছিল না। সেই যুগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শাস্ত্রকে অবলম্বন করেই রক্ষণশীলতার দুর্গে আঘাত করেছিলেন। বিধবাবিবাহ ও বহুবিবাহ বিষয়ক বইগুলো তাঁর যুক্তিবাদী মননের পরিচায়ক।

বিধবাবিবাহ প্রবর্তন করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং কিছুদিন পথে চলাচল করার সময় তিনি লাঠিয়াল রেখেছিলেন। বিধবাবিবাহ উপলক্ষে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছেন তিনি। বিদ্যাসাগরের তেজস্বী চরিত্রের অন্যতম দিক হচ্ছে, কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে সংকল্পের অটলতা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তাঁর একমাত্র পুত্র নারায়ণ বিধবাবিবাহের সিদ্ধান্ত নিলে আত্মীয়েরা সম্পর্ক ছেদের ভয় দেখিয়েছিলেন। সহোদর শম্ভুচন্দ্রের চিঠিতে এ কথা জানতে পেরে বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন, ‘আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি; নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক হইবে, তাহা করিব; লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।’

যুক্তিকে অবলম্বন করে তিনি কুসংস্কার ও দেশাচারের দুর্গে আঘাত করেছেন। শাস্ত্রের অন্ধ বিরোধিতা নয়, শাস্ত্রের ভেতর থেকে যুক্তি আহরণ করে শাস্ত্র দিয়ে শাস্ত্র মোকাবিলা করার অব্যর্থ উপায় বিদ্যাসাগর আমাদের দেখিয়েছেন। নিজে ব্রাহ্মণ ছিলেন, অথচ ব্রাহ্মণ- অব্রাহ্মণ সকলের জন্য তিনি শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন। সংস্কৃতে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর, কিন্তু ইংরেজিকে শিক্ষাগ্রহণের বাহনে পরিণত করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের চরিত্র সম্পর্কে মাইকেলের মূল্যায়ন অবিস্মরণীয়– ‘প্রাচীন ঋষিদের মতো প্রতিভা ও জ্ঞান, ইংরেজদের মতো প্রাণশক্তি আর বাঙালি মায়ের হৃদয়।’ মাইকেলই তাঁকে প্রথম বলেছিলেন ‘করুণাসাগর’ আর বলেছিলেন ‘First man among us’। সংস্কারমুক্ত মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী ছিলেন তিনি। ‘দয়ার সাগর’, ‘করুণার সাগর বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনের সিংহভাগ ব্যয় করেছেন শিক্ষাবিস্তারে। নিজ গ্রাম বীরসিংহে ১৮৫৩ সালে অবৈতনিক ও আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছর ধরে তিনি একটি নর্মাল স্কুলসহ ২০টি মডেল বিদ্যালয়, ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি কলেজ স্থাপন করেছিলেন। আজকের শিক্ষা ব্যবসায়ীরা হয়তো জানেন না বিদ্যাসাগরের এই প্রচেষ্টা ছিল শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে, বিত্ত অর্জনের জন্য নয়। ইতালীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে প্রায়ই বাংলার নবজাগরণের তুলনা করা হয়। ইতালীয় রেনেসাঁসের নায়কদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগরের কীর্তি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিধবাবিবাহ, দুস্থ-পীড়িতকে সেবাদান প্রভৃতি সমাজহিতৈষী কাজের জন্য বিদ্যাসাগর যে শ্রম, অর্থ ও বিদ্যা ব্যয় করেছেন এর কোনো তুলনা ইতালীয় রেনেসাঁসের ইতিহাসে নেই। বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবসেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ। তিনি ছিলেন পরাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। প্রখর আত্মমর্যাদা ও অসামান্য তেজস্বিতায়, বিপন্ন মানুষের দুর্দশা মোচনে, শিক্ষাবিস্তারে, নারী অধিকার রক্ষায় খাঁটি হিউম্যানিস্ট বিদ্যাসাগর ছিলেন অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব।’

অক্ষয় মনুষ্যত্বের বলে বলীয়ান হয়েই বিদ্যাসাগর রেনেসাঁসের চেতনাকে ধারণ করেছিলেন। এই বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও প্রজ্ঞাকে বিদ্যায়তনিক পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সার্থকতার সাথে প্রয়োগ করেছেন। তাঁর মানবমুখিনতা, আধুনিকতা, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁকে বাংলার রেনেসাঁসের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্কে পরিণত করেছিল।

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত।


কোন মন্তব্য নেই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

vidyasagar.info ©