এই প্রবন্ধে মানব দরদী বিদ্যাসাগরের প্রতিভা, ন্যায় নিষ্ঠার প্রতি ঝোঁক এবং কর্মজীবনে সেগুলোর প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা লাভ তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের একাধিক দিক রয়েছে। স্বল্প পরিসরে তাঁর বহুমুখী সংস্কারমূলক তৎপরতা তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই এখানে দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে-স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের মাধ্যমে নারী মুক্তি। এই দু’টি মুখ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি যে সব পদক্ষেপ ও সংগঠনমূলক কৌশল গ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়েছেন তা কতকটা বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। পরিশেষে আমাদের নারী সমাজের বর্তমান অবক্ষীয়মান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের কর্মকুশলতার তাৎপর্য সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
—শর্মিষ্ঠা রায়
ঊনবিংশ শতকের অবিভক্ত বাংলায় মানবহিতৈষী, নির্ভীক, আপন মনোবলে অটুট এবং স্বাধীনচেতা যে মহামানবের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে তিনি পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অবিভক্ত বাংলায় তিনি ছিলেন বিধাতার আশীর্বাদ স্বরূপ। তিনি একাধারে দয়ার সাগর, জ্ঞানের সাগর, হাস্যরসিক, খ্যাতকীর্তি সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক, বলিষ্ঠ চেতনার অগ্রদূত হিসেবে আজও বাংলার ঘরে ঘরে সমাদৃত। ১৮২০ সালে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও স্বীয় প্রতিভা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি পৃথিবীর বরেণ্য ব্যক্তিদের মাঝে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এই প্রবন্ধে স্বল্প পরিসরে তাঁর সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মূল দু’টি বিষয় আলেচিত হয়েছে—নারীশিক্ষা বিস্তার ও বিধবা বিবাহ প্রচলন। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের পূর্বে তাঁর প্রতিভা ও কর্মজীবন সম্পর্কে দু’একটি কথা উল্লেখ করছি।
