প্রকাশকাল ১৮৩৬, প্রকাশক ‘কলিকাতা ট্রাক/ট্র্যাক সোসাইটি’। বইটিতে বর্ণপরিচয় অংশটি নেই, কিন্তু উনিশ শতকের প্রথমার্ধের
বাংলা প্রাইমারের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ধরা আছে। বালকের প্রথম পড়িবার বহি গ্রন্থে আছে ছোট ছোট বাক্য গঠন এবং পরে প্রাথমিক
পাঠের আয়োজন। পাঠের বিষয় হল— নীতিশিক্ষা এবং বিদ্যালয়ের সুফল সম্পর্কিত বক্তব্য। এ ছাড়া আছে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারমূলক
আখ্যান এবং হিন্দু ধর্মের মূর্তিপূজা সম্পর্কে বিরূপ ব্যাখ্যা। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয়
গ্রন্থের বেশ কিছু বাক্যপাঠ নির্মিত হয়েছে হুবহু বালকের প্রথম পড়িবার বহি গ্রন্থে উল্লিখিত বাক্যপাঠের অনুকরণে।
—আবীর কর
তখনও বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়নি। সময়কাল হল ১৮১৬, লঙ সাহেব প্রদত্ত বাংলা ক্যাটালগের তথ্যানুসারে যা বাংলা প্রাইমারের প্রথম প্রকাশকাল হিসেবে চিহ্নিত। ১৮১৬ সালে শ্রীরামপুর মিশনারিরা প্রকাশ করেছিলেন লিপিধারা নামে বর্ণশিক্ষার বই। যদিও এ যাবৎ বইটির কোনও হদিশ মেলেনি, তবে জেমস লঙ-এর তথ্য অনুসারে লিপিধারা নামে ১২ পৃষ্ঠার বইয়ে বাংলা বর্ণের আকৃতি অনুযায়ী ছিল বইটির বর্ণবিন্যাস। অর্থাৎ ভাষাতত্ত্বের পথ মেনে উচ্চারণভিত্তিক নয়, রূপগত বিচারে বর্ণের জ্যামিতিক ফর্ম মেনে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা বর্ণ পরিচয়ের প্রথম বইটি। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৮১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি’, যার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশনা। সেই ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ থেকে স্টুয়ার্ট সাহেব লিখলেন বর্ণমালা, এই গ্রন্থটিরও উল্লেখ মিলছে লঙ-এর ক্যাটালগ থেকে, লঙ সাহেবের বর্ণনা অনুসারে বর্ণমালা বইয়ের গোড়ায় ছিল বর্ণের পরিচয় পরে ‘ত্র্যক্ষর’ শব্দের বানান। এরপর লঙ-এর ক্যাটালগে যে-বইটির উল্লেখ আছে সেটি রাধাকান্ত দেবের বাংলা বানানের বই। তার বক্তব্য অনুযায়ী বইটি বানান শেখার বই, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৫৬। কিন্তু এই বইটি নিয়ে সংশয়ের বিষয় হল এই যে, রাধাকান্ত দেবের আলোচনায় কোথাও এই গ্রন্থটির উল্লেখ পাওয়া যায় না। সাহিত্য-সাধক চরিতমালা-য় রাধাকান্ত দেব সম্পর্কে আলোচনায় বাংলা শিক্ষাগ্রন্থ (১৮২১)-এর নাম আছে, যেখানে বিষয় হিসেবে প্রাথমিক বাংলা, বাংলা ব্যাকরণ, ইতিহাস ভূগোল, গণিতের সংকলন লক্ষ করা যায়।