বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষা, প্রৌঢ়শিক্ষা, বিধবাবিবাহ— এ-সবকিছুর মাধ্যমে চেয়েছিলেন সামাজিক পরিবর্তন। তিনি জোর দিয়েছিলেন শিক্ষার উপর, কারণ তিনি বুঝেছিলেন, শিক্ষাই সামাজিক পরিবর্তনের জন্য মোক্ষম অস্ত্র। নারীশিক্ষা ও নারীর প্রতি সম্মান সমাজের গতিপথে উন্নতি আনবে। এক শিক্ষিতা নারী পরিবারের শিক্ষার জন্য দীপশিখা। আমাদের দায়িত্ব সেই অদ্ভুত আধুনিক মনোভাবাপন্ন বিদ্যাসাগরের দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত করে রাখা।
—প্রমথেশ দাস
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য উত্তম চরিত্র ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা। এই লক্ষ্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীতে শিক্ষাধারা অব্যাহত রয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে যদি উত্তম চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের মাপকাঠিতে বিচার করতে হয়, তখন একটি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে দেখতে হয়, যে তার চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মধ্যে কী কী মূল্যবোধ, কত মাত্রায় বিদ্যমান বা প্রকাশ পাচ্ছে। যে-কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলে আমরা তার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র দেখি না, কিন্ত শিক্ষার প্রমাণ ও প্রভাব তার আচরণের মধ্যেই প্রকাশ পায়। আচরণ অন্তর্নিহিত জ্ঞান, চিন্তা ও বিচারবুদ্ধির পরিপ্রকাশ। কোনো মনীষী শিক্ষার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যথার্থই বলেছেন— শিক্ষা হলো সেই জিনিস যা একজন মানুষের মধ্যে থেকে যায় যখন তার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে এবং পড়ার বিষয়বস্তু ভুলে গেছে।
বিদ্যাসাগরের অনাড়ম্বর পোশাক এবং অতি সাধারণ চেহারার ভেতর থেকে প্রকাশ পেত অন্তর্নিহিত তেজ, প্রচণ্ড বিচারশক্তি এবং প্রগাঢ় মূল্যবোধের অভিব্যক্তি। যে-শিক্ষা তিনি পেয়েছেন বীরসিংহ গ্রামে, পরিবারে এবং কলকাতায়, তিনি তাঁর অতিমানস শক্তির দ্বারা সে-শিক্ষাকে নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সুচারুভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সেই অতিমানস শক্তি তাঁকে শিক্ষা ও সমাজসংস্কারে অদম্য প্রেরণা ও সাহস দিয়েছে। তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মূল্যবোধের এক জীবন্ত উদাহরণ।