ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন সত্যনিষ্ঠ একজন সাহসী মানুষ; তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তাই তিনি বলতেন এবং করতেন। সমাজে তিনি বিধবা বিবাহের জন্য দাবি তুলেছিলেন; তাঁর সে দাবি তিনি প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন। গোটা নারীজাতি এবং সমাজকে পথ দেখিয়ে নিজেও তিনি কখনো পিছিয়ে থাকেননি। নিজের একমাত্র ছেলে নারায়ণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভব সুন্দরী নামে এক বিধবার সাথে তিনি বিয়ে দিয়েছিলেন।
—ফরিদ আহমদ দুলাল
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মেছিলেন আজ থেকে দু’শবছর আগে। এই দু’শবছর ধরেই বিদ্যাসাগর বাঙালির জীবনে বেঁচে আছেন সরবে। জীবন, এমন এক সময়, যে সময়টাকে মানুষের কল্যাণে সঠিক ব্যবহার করতে পারলে মৃত্যু তাকে মেরে ফেলতে পারে না কোনোদিন; এবং সেখানেই জীবনের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। আমাদের অহংকার, বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি বঙ্গবন্ধুর বুকে বুলেট-মৃত্যু সেঁটে দিয়ে যারা ১৯৭৫-এ তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল; যারা দশকেরও অধিক সময় ধরে প্রতিদিন মেরে ফেলতে চেয়েছে শেখ মুজিবের নাম; তারা কি ব্যর্থ হয়ে যায়নি? তারা আজ কোথায়? ইতিহাসের কোন আঁস্তাকুড়ে ঠাঁই পেয়েছে তারা আজ? কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন তাঁর কীর্তি আর ত্যাগের মহিমায়। সাধারণেরা আয়ুষ্কাল ফুরালেই মরে যায়; কিন্তু কীর্তিমানেরা বেঁচে থাকেন মানুষের চিন্তায়-মননে আর সৃষ্টিশীলতায়। পৃথিবীতে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাঙালির স্বাধীনতার সম্মান উজ্জীবিত থাকবে; ততদিন বাঙালির জাতিপিতার নাম উচ্চারিত হবে বাঙালির ঘরে ঘরে। একইভাবে বাংলা ভাষা যতদিন বেঁচে থাকবে, বাঙালি নারীর সম্মানবোধ যতদিন জাগরূক থাকবে, ততদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে, ততদিন বাঙালিকে শরণাপন্ন হতে হবে তাঁর কাছে।